রিক্সাচালকের নির্বাচন
বাংলাদেশের আর পাঁচটি উৎসবের মত জাতীয় নির্বাচনের আমেজটাও ছিল চমৎকার। নির্বাচনের আমেজ যেন ছোট থেকে বড় সবার মাঝেই ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রচার-প্রচারণা, আড্ডা, মিটিং-মিছিল আর তর্কের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে একজন রিক্সাচালকের যে চিন্তা ভাবনা সেটাই তুলে ধরেছি আজকের সাক্ষাৎকারে। একজন রিক্সাচালক নির্বাচনের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত যে বিষয়গুলো উপলব্ধি করেছেন এবং তার যাত্রীরা যেসব বিষয়ে কথোপকথন করেছেন সে বিষয়ে আমরা জানতে পারি। এছাড়াও রিক্সাচালকের নিজের কিছু কথা বলেন যা সম্পুর্ন তার নিজ ভাবনা।
প্রশ্নঃ আপনার নাম?
ইয়াসিনঃ আমার নাম মোঃ ইয়াসিন আলী। বাড়ি বিদীরপুর, রাজশাহী।
প্রশ্নঃ কতদিন থেকে আপনি রিক্সা চালান?
ইয়াসিনঃ প্রায় দশ বছর ধরে আমি রিক্সা চালায়।
প্রশ্নঃ পাঁচ বছর পর আজকে আবারো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তো আপনার কেমন লাগছে?
ইয়াসিনঃ আমার খুবই ভালো লাগছে আর মনে হচ্ছে আজকে ঈদের দিন। কারন ঈদের দিনের মতই রাস্তায় তেমন গাড়ি চলছে না।
প্রশ্নঃ আপনি কি আপনার ভোট দিয়েছেন? ভোট দিতে গিয়ে কোন সমস্যায় পড়েছিলেন?
ইয়াসিনঃ হ্যাঁ আমি ভোট দিয়েছি। ভোট দিতে গিয়ে সমস্যা হয়েছিল তখন ভোট না দিয়ে চলে আসি। কারন আজ সারাদিনের জন্য আমার রিক্সার ভাড়া ঠিক করা ছিল তাই ভেবেছিলাম সকাল সকাল ভোট দিয়ে এসে ভাড়া মারবো কিন্তু সকালে ভোট দিতে পারিনি। তবে দুপুরের আগে ভোট দিয়েছি।
প্রশ্নঃ কি সমস্যা হয়েছিল যদি একটু বলতেন?
ইয়াসিনঃ আমি সকাল ৭.৩০ এ ভোট কেন্দ্রে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন হঠাৎ করেই কোথায় থেকে কয়েকজন ছেলে এসে লাইন থেকে কিছু লোককে বের করে দিচ্ছিলো এই দেখে অন্য দলের ছেলেরা তাদের মারা শুরু করে। তারপর ককটেল ফাটায় এবং লাঠি নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
প্রশ্নঃ নির্বাচনের আগের অবস্থা কেমন ছিল?
ইয়াসিনঃ নির্বাচনের আগের অবস্থা ভালই ছিল। নমিনেশন পাওয়ার পর থেকে পাড়ায় পাড়ায় মোড়ে মোড়ে ক্লাব গঠন করা হয়। আমি আমার এলাকাসহ বাইরের অন্য এলাকায় গিয়েছি সেখানে চা খেয়েছি। তবে শেষ দিকে এসে দেখেছি ক্লাব পোড়ানোর বিষয়টা। তবে আমি বলতে পারবো কে এই কাজ করেছে। লোক মুখে শুনেছি তারা নাকি নিজ নিজ ক্লাব পুড়িয়ে অন্যদের নাম দিয়েছে।
প্রশ্নঃ নির্বাচন নিয়ে আপনার কি কি প্রত্যাশা ছিল?
ইয়াসিনঃ আমি একজন রিক্সাচালক আর ভোটে যেই জিতুক না কেনো আমাকে রিক্সা চালায় খাওয়া লাগবে। তবে আমার শুধু একটাই চাওয়া যে আমি যত দিন কাজ করে খেতে পারবো ততদিন দেশে গন্ডগোল না হয়। রিক্সা না চালালে কিস্তি দিতে মানুষের কাছে ধার করা লাগে।
প্রশ্নঃ আজকে কত টাকা আয় করেছেন?
ইয়াসিনঃ আজকে ৫০০ টাকা আয় হয়েছে। আমি খুব খুশি।
প্রশ্নঃ কিভাবে এতো টাকা আয় করলেন?
ইয়াসিনঃ আমাকে আজ সারাদিনের জন্য ৫০০ টাকা দেওয়া হয় এবং একটি এলাকার যত বৃদ্ধ মানুষ আছে তাদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসতে বলা হয় এই কাজ করার জন্যই আমি ৫০০ টাকা আয় করেছি।
ধন্যবাদ ইয়াসিন ভাই আপনাকে এবং নতুন বছরের আগাম শুভেচ্ছা।
ফটো ক্রেডিট। thehindu